সিপিএ মার্কেটিং করে আয় করবেন যেভাবে
ইন্টারনেট মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিগুলোর মধ্যে সিপিএ মার্কেটিং অন্যতম। কিছু নির্দিষ্ট্য কাজ যেমন কোন কিছু ডাউনলোড, কোন সাইটে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন কিংবা কোন কন্টেন্ট সোশ্যাল সাইটে শেয়ারের মত ছোট ছোট সিপিএ মার্কেটিং করে আয় করতে পারেন আপনি খুব সহজেই। আজ আমি সিপিএ মার্কেটিং করে কিভাবে অনলাইন থেকে আয় করতে পারবেন তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। তার আগে, প্রথমেই আমরা জানব সিপিএ মার্কেটিং আসলে কি।
সিপিএ মার্কেটিং
সিপিএ মার্কেটিং এর পূর্নাঙ্গ নাম হচ্ছে কস্ট পার অ্যাকশন। এটা একটা অনলাইন আয়ের সহজ মাধ্যম। সিপিএ মার্কেটিং অনেকটা এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মত। তবে, এফিলিয়েট মার্কেটিং এর থেকে সিপিএ মার্কেটিং এ টাকা ইনকাম করা সহজ। এর কারণ হচ্ছে, এফিলিয়েট মার্কেটিং এ প্রোডাক্ট সেল করা লাগে কিন্তু সিপিএ মার্কেটিং এ প্রোডাক্ট সেল এর কোন প্রয়োজন হয় না। কোন একটা অফার এর ফাস্ট পেজ পূরণ করলেই আপনার ইনকাম হবে।
বিষয়টা আমি আরেকটু সহজ করে বলি, আপনি যেই অফার নিয়ে কাজ করবেন সে অফার এ একটা ইমেইল সাবমিট এর পেইজ অথবা ফাস্ট পেইজ সাবমিট এর পেইজ থাকে। আর সেটা পূরণ করলেই আপনার লিড কাউণ্ট হবে, মানে আপনার টাকা ইনকাম হবে, কোন সেলস এর প্রয়োজন হবে না।
সিপিএ মার্কেটিং করে আয় করার নেটওয়ার্ক
যে-সব সাইট এ গেলে আপনি সিপিএ নেটওয়ার্ক খুঁজে পাবেন তার মধ্য থেকে সর্বোচ্চ ভালো কিছু সিপিএ মার্কেটিং নেটওয়ার্ক এর একটা তালিকা আমি নিচে দিয়ে দিলাম-
- Peerfly.Com
- MaxBounty.Com
- CpaLead.Com
- CpaGrip.Com
- JvZoo.Com
- MatoMy.Com
- AdworkMedia.Com
- Convert2Media.Com
- ClickBooth.Com
উপরে দেওয়া এসবসাইটগুলোতে যাবেন এবং তাতে দুটো করে অপশন থাকবে-
- অ্যাডভারটাইজার
- পাবলিশার
অতপর পাবলিশার লেখাতে ক্লিক করে সঠিক ইনফরমেশনগুলো সেখানে দিয়ে অ্যাকাউন্ট করে নিবেন। নিচের ছবির মত সাইন আপ পেইজ আসবে সেটা পূরন করে অ্যাকাউন্ট করতে হবে।
আপনাদের বোঝার সুবিধার্তে আমি আরো বলে রাখছি, যেহেতু আমরা অন্যের প্রোডাক্ট নিয়ে মার্কেটিং করব, তাই আমরা পাবলিশার। আর যদি আমরা নিজের প্রোডাক্ট নিয়ে মার্কেটিং করতাম, তবে আমরা অ্যাডভারটাইজার হতাম। যেহেতু আমাদের নিজেদের কোন প্রডাক্ট নেই, সেহেতু আমরা অন্যের প্রডাক্ট সেলস এর জন্য কাজ করব।
আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন কেন আমরা পাবলিশার হিসেবে অ্যাকাউন্ট করব। এবার আসি কোন নেটওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট করার পর আমাদের যা করণীয় সে আলোচনায়-
আমাদের প্রথমেই নিশ সিলেক্ট করতে হবে যে কোন নিশ নিয়ে আমরা কাজ করব।
আমি আরও বলে রাখছি নিশ মানে হচ্ছে বিষয়। আমরা কোন বিষয় নিয়ে মার্কেটিং করব সেটাই সিলেক্ট করতে হবে। আর এই বিষয়কেই অনলাইনের ভাষায় নিশ বলে।
আমরা এমন একটা নিশ সিলেক্ট করব যার চাহিদা বর্তমানে আকাশচুম্বি। তার মধ্যে কিছু হট নিশ আমি বলে দিচ্ছি-
- মেক মানি বা অনলাইন আয়
- ফুড বা খাদ্য
- ট্রাভেলিং
- মোবাইল অ্যাপস্
- বিভিন্ন সফটওয়্যার
- এডুকেশন
- হোম বেসড বিজনেস
- হেলথ
- তথ্য এবং প্রযুক্তি
আমি যে-সব নিশ গুলোর কথা বললাম এগুলো সুপার হট নিশ। এই নিশগুলোর চাহিদা মার্কেটে কখনই ফুরাবে না। কারন হচ্ছে,যেমন টাকা একটা নিশ টাকার চাহিদা মানুষের সব সমইয় থাকবে, তাই এটা একটা সুপার হট নিশ।
তারপর ধরুন ফুড, মানুষ যতদিন বেঁচে রবে ততদিন খাদ্যের প্রতি তাদের চাহিদা থাকবে।
এটা হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির যুগ, তাই অনেকেই তথ্য ও প্রযুক্তি নিয়ে জানতে চাইবে বা কাজ করতে চাইবে, সে অর্থে এটাও একটা হট নিশ। এছাড়াও অনেক অনেক নিশ রইয়েছে পৃথীবিতে। আপনি যে কোনো একটা নিশ সিলেক্ট করে সেটা নিয়ে এনালাইসিস করে কাজ শুরু করে দিতে পারেন।
সিপিএ মার্কেটিং এর পেমেন্ট মেথড
বিভিন্ন সিপিএ নেটওয়ার্ক বিভিন্নভাবে পেমেন্ট দেয়, মানে কিছু নেটওয়ার্ক আছে ৩০দিনে পেমেন্ট দেয়, আবার কিছু নেটরয়ার্ক আছে ১৫ দিন বা ৭ দিনেও পেমেন্ট করে থাকে। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই উলিক্ষিত দিনগুলোর মধ্যে আপনার অ্যাকাউন্টে সর্বনিন্ম ৫০ ডলার বা ৩৫ ডলার হতে হবে। নইলে আপনি টাকা ওইথড্র দিতে পারবেন না। যখন আপনার কাঙখিত টাকা অ্যাকাউন্টে জমা হবে তখন টাকা ওইথড্র দিতে পারবেন।
টাকা ওইথড্র নেয়ার জন্য অবশ্যই আপনার একটি পেইজা কিংবা পেপাল অ্যাকাউন্ট, লোকাল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অথবা পেওনিয়ার মাস্টার কার্ড থাকতে হবে।
সিপিএ মার্কেটিং করে আয় করার সাকসেস মেথড
এবার আসি সিপিএ মার্কেটিং এ অফার প্রোমোট করতে আপনি কি কি সাকসেস মেথড গ্রহন করবেন তা নিয়ে। আপনি ফ্রি বা পেইড এই দুই মেথডই কাজ করতে পারেন।
তবে ফ্রি মেথড এ কাজ করলে আপনার সাকসেস রাতারাতি আসবে না, আপনাকে ধৈর্য ধরে কাজ কন্টিনিউ চালিয়ে যেতে হবে। আর পেইড মেথড নিয়ে কাজ করলে আপনার সাকসেস হওয়ার পসিবিলিটি অনেক বেশি থাকে। আমি দুটি মেথডই আপনাদের শেখাব, তারপর আপনাদের কাছে যেটা ভালো মনে হবে আপনারা সেটাই করবেন।
প্রথমেই ফ্রি মেথড নিয়ে বলছি, ফ্রি মেথড এর মধ্যে রয়েছে-
১) ব্লগ রাইটিং
আপনি ব্লগার ডট কম এ গিয়ে আপনার জিমেইল অ্যাকাউন্ট দিয়ে একটি ব্লগার অ্যাকাউন্ট করে নিতে পারেন। অতপর সেখানে আপনার নিশ রিলেটেড যে অফার বা প্রডাক্ট নিয়ে মার্কেটিং করবেন তার উপর ব্লগ লিখে ফ্রি মার্কেটিং করতে পারেন।
২) এস এ ও
আপনি আপনার অফার নিয়ে এস ই ও করে ফ্রি মার্কেটিং করতে পারেন।
৩) ফেইসবুক ফ্রি মার্কেটিং করতে পারেন
কিছু ফেইসবুক আইডি বানিয়ে তাতে আপনার অফার রিলেটেড নাম দিয়ে গ্রুপ, পেইজ বানাবেন। অতপর সেখানে যে দেশের প্রডাক্ট নিয়ে কাজ করছেন, সে দেশের মানুসের সাথে ফেসবকে ফ্রেন্ড রিকুইয়েস্ট দেবেন। তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করবেন, তাদেরকে আপনার গ্রুপ বা পেইজে ইনভাইট করবেন।
কারা আপনার অফার এর উপর ইনটারেস্টেড তা জানার জন্য যা যা করার প্রয়োজন, তাই করবেন। আপনার অফার রিলেটেড নাম দিয়ে ফেইসবুকে সার্চ দিয়ে দেখবেন অনেক অনেক গ্রুপ পাবেন, সে-সব গ্রুপে করবেন। তারপর সে-সব গ্রুপ এর মেম্বারদেরকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিন। আর এই সব মেম্বারগুলোই হচ্ছে লেজার ট্রার্গেটেড ট্রাফিক যারা কিনা আপনার অফার এর প্রতি আগ্রহী হতে পারে।
৪) ফোরাম
ফোরাম করেও আপনি মার্কেটিং করতে পরেন। ফোরাম হচ্ছে কমেন্ট এ আমরা যে-সব আলোচনা করি সে-রকম।
৫) ইউটিউব এ ভিডিও আপলোডের মাধ্যমেও আপনি ভিডিও মার্কেটিং করতে পারেন।
৬) ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে আমরা ট্রাফিক জেনারেট করতে পারি।
পেইড মার্কেটিং মেথডঃ
উপরোক্ত কাজ গুলোই আমরা করব তবে সেসব কাজের সাথে আমরা এক্সট্রা যোগ করব ইনভেস্ট যাতে আমাদের ইনকাম পসিবিলিটি বেড়ে যায় এবং খুব তাড়াতাড়ি আমরা ফিডবেক পাই।
যেমন-
ফেইসবুকে আমরা আমাদের পোস্ট বুস্ট বা প্রমোট করব। আর আমাদের সেই পোস্ট হবে অফার নিয়ে। যাতে করে ট্রাফিক আমাদের পোস্ট পড়ে এবং ফাস্ট পেইজ সাবমিট করে বা তাদের মেইল সাবমিট করে। সেজন্য ফেইসবুককে আমাদের পে করতে হবে, আমরা চাইলে সর্বনিন্ম ১ ডলার এর ও বুস্ট করাতে পারি।
সেজন্য আমাদের টাকা ইনভেস্ট করে ইমেইল সার্ভার কিনতে হবে । ইমেল মার্কেটিং কিছু সাইট আছে যেগুলো থেকে টাকা দিয়ে হোস্টিং নিয়ে আপনি মাসে সর্বনিন্ম ১৫০০০ মেইল সেন্ড করতে পারবেন। এখন ১৫০০০ মেইল থেকে আপনার যদি ১% ট্রাফিকও জ়েনারেট হয়, তবুও আপনার মাসে ১৫০ লিড জেনারেট হবে। এখন যদি প্রতি লিড এ ১ ডলার করেও কাউণ্ট হয় তবুও আপনার মান্থলি আর্নিং হবে ১৫০ ডলার । এটা সর্বনিন্ম হিসাব, আপনার এর থেকে আরো বেশি ইনকাম হবে আশা করি।
আপ্নার নিশ রিলেটেড কোন ওয়েবসাইট এ আপনি আপনার অফার নিয়ে অ্যাড দিতে পারেন। আর এই অ্যাডের মাধ্যমেও আপনার ট্রাফিক জেনারেট হবে।
তাছাড়া ইউটিউব এ ভিডিও মার্কেটিং করেও লিড জেনারেট করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ইউটিঊব এর ভিডিওর অ্যাড করাতে হবে যার জন্য আপনার ইনভেস্ট করা লাগবে।
আপনার অফার রিলেটেড ভিডিও বানাবেন। ইচ্ছে করলে আপনি নিজের ফেইস দিয়েও ভিডিও বানাতে পারেন অথবা প্রপেশনাল ভিডিও মেকারদের হায়ার করে বানাতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার প্রতি ভিডিও বানাতে তাদেরকে দিতে হতে পারে ৫ ডলার বা তার কম বা তার একটু বেশী।
আশা করি সবাই সিপিএ তে কাজের মেথড গুলো বুঝতে পেরেছেন।
এছাড়াও আপনারা পিন্টারেস্ট, টুইটার, ইত্যাদি সোসাল মিডিয়া সাইটগুলোতে আপনার অফার প্রোমোট করে লিড কাউন্ট করতে পারেন।
পরিশেষে বলব আমাদেরকে সর্বদা সততার সাথে কাজ করে যেতে হবে, আমরা ইউনিকভাবে কাজ করে যাব, ইনশাল্লাহ আমাদের সফলতা একদিন আসবেই।
আমরা স্ক্যাম মার্কেটিং করব না। সিপিএ নেটওয়ার্ক গুলোর সব টার্মস এন্ড কন্ডিশন মেনে আমরা কাজ করে যাব। আমার লেখাটি যদি আপনাদের ভালো লাগে আপনাদের, বিন্দুমাত্র উপকারেও আসে তবেই আমার এ কষ্ট সফল হবে।
No comments